এখনো হাত ধরা বাকি

প্রত্যেক মানুষ একেকটি বই, আমরা তাদেরকে পড়ি—
কাউকে পড়তে লাগে মাস, কাউকে পড়ে শেষ করতে দু'মাস,
কাউকে পড়ে বুঝতে পারি দিন কয়েকেই,
কাউকে কখনো বোঝাই হয় না,
কাউকে কখনো পড়াই হয় না।
কিছু মানুষ কবিতা, কিছু মানুষ উপন্যাস,
কিছু মানুষ ছন্দ, কেউকেউ অমিত্রাক্ষর গদ্য।
তুমি কী পড়বে, এ তোমারই দায়।
কিম্বা, তুমি কী পড়তে চেয়েছিলে, কী পড়তে বসে গেলে,
এ তোমারই ভুল।
ছন্দ বোঝার আগেই কাব্যের পৃষ্ঠা ওল্টালে তুমি!
তাড়াহুড়ো ছিল খুব?
যাকে পড়ার ছিল, না-পড়েই উল্টিয়ে গেলে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা!
অনীহা অপচয় করে দিলো তোমাকে, বইকে?
কিছু বই স্পষ্টাক্ষরে লিখা,
কিছু বইয়ের ভাষা পঙক্তিতে নেই— আছে পঙক্তিমালার শূন্যস্থানে।
এজগৎ—
রহস্যতম বই, এবং এজীবন সে-বইয়ের দীর্ঘতম অধ্যায়।
কিছুই অলৌকিক নয়, সমস্তই সত্য—
অক্ষরের মতো।
শুধু, বুঝতে শেখো, পড়তে শেখো, খুঁজে নিতে শেখো—
অক্ষরের না-বলা কথা।
বইটি সযত্নে রেখে দিয়ো—
নিজেকে পোড়ো তারপর,
নিজেকে পড়তে শিখে গেলে তবেই—
অপরকে পড়ার দায় থেকে মুক্তি মেলে।
সহজে মরতে পারতি বয়সে বা রোগে,
ভালোবাসা ছুঁয়ে নির্বোধ মরলি দুর্ভোগে।
কামুক দেহের চেয়ে ঢিবঢিব হৃদয়ের সন্ধানই শ্রেয়,
একমুঠো কম খেয়ে জোছনা দেখতে বসা আহ্লাদ নয়,
প্রতিটি টাকার পাশে চুপচাপ বসে থাকে প্রিয় মুখগুলো,
"কেমন আছ"র চেয়ে নিঃশব্দ 'টুপ চুমু' চিরকাল প্রিয়।
স্যাণ্ডেলে দু'রকম ফিতের অর্থ কিন্তু অসংসার নয়,
বিছানার মাঝখানে কোলবালিশের নাম— "বাঁধা নয় ডিঙিয়েই আসো",
গাড়িবাড়িশাড়ি ভালো, তার চেয়ে প্রয়োজন একখানা বুক,
বেলির ঝাড়ের নিচে বসে থাকা সাপটিরও প্রেমিকের আঙুলকে ভয়।
পিঙ্গল বর্ষায় ঝাল খিচুড়ির চেয়ে আলিঙ্গন অধিক অমল,
ঘাম মুছে না-দিয়ে লোনার বুকে আরো লোনা মেখে দেওয়াটাই প্রেম,
এক পাতে দু'টি হাত জমা রেখে মুঠো-ভাত আঙুলে আঙুল মাখার ইচ্ছেই মায়া,
কলস ভরাট রেখে তিয়াস মেটাতে হয় প্রিয়তম দু'চোখের শুষে অশ্রুজল।
ভাতে উদরপূর্তি নয়, ভাত যোগাড়ের ইচ্ছেই সংসার।
আমি ভিন্ন যাপন চেয়ে তোমার বুকের পাশে জন্মাতে চাইবো আবার।
অসহ্য জীবন
কুড়িতে আছ যারা—
আশা করি আজকের দিনটি সুন্দর কাটছে।
জানি— জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ নিয়ে ভাবতে-ভাবতে তোমরা ক্লান্ত।
তোমরা হতাশ, আশেপাশের মানুষদের প্রত্যাশা পূরণ করতে না-পেরে।
জানি, তোমরা ভেঙে পড়েছ, জীবনের যাত্রাপথে হাবুডুবু খেতে-খেতে।
এইমুহূর্তে তোমরা প্রত্যেকেই মনে করছো— অন্যের চেয়ে পিছিয়ে গেলে জীবনের দৌড়ে।
রোজ সকালে ঘুম থেকে জেগেই পৃথিবীর রূঢ় বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হওয়াটা, অতো সহজ নয় তোমাদের এই বয়সে।
রোজ, প্রতিমুহূর্তেই, তোমাদেরকে মুখোমুখি হতে হচ্ছে কোনো-না-কোনো বিষাক্ত মানুষের দেওয়া তিক্ত অভিজ্ঞতার।
তোমাকে চলতে হচ্ছে প্রতিদিন, সেইসব মানুষের সাথে, যারা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে তোমাকে হারিয়ে দেওয়ার, অপদস্থ করার।
এমনকি প্রত্যেকদিনই তুমি এমন কারো-না-কারোর দেখা পাচ্ছ, যে তোমাকে হাসিমুখে বিষ পান করাতে জন্মেছে,
যে তোমাকে তার সাফল্যার ধারেকাছে ঘেঁষতে দিচ্ছে না,
যে তোমাকে ভুল পথে নিয়ে যেতে উঠেপড়ে লেগেছে।
আসন্ন জীবনে, প্রচুর ক্ষণস্থায়ী মানুষের দেখা পেতে যাচ্ছ তুমি,
যারা— তোমাকে সুখী করবে, কিন্তু সাথে থাকবে না জীবনের।
আসন্ন জীবনে, অকল্পনীয় লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছ তুমি,
যেগুলো— তোমাকে তোমার লক্ষ্য থেকে টেনেহিঁচড়ে সরিয়ে দেওয়ার প্রাণান্তকর চেষ্টায় থাকবে।
এসবে, একসময় তুমি ক্লান্ত হয়ে পড়বে।
কিন্তু, হাল ছেড়ো না।
তুমি অসহায় নও, তোমার ক্ষমতা অকল্পনীয়— যার দেখা তুমি পাওনি এখনো!
তুমিই মহাজগৎ।
অন্যের প্রত্যাশাকে কখনোই সুযোগ দিয়ো না তোমার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার।
তুমিই শ্রেষ্ঠতম।
নিজেতে বিশ্বাস রেখো।
সেই সময়টি এই এলো বলে—
যেদিন, তুমি সেখানে নিজেকে দেখতে পাবে, যেখানে দেখতে চাও।
যেদিন, তুমি তোমার স্বপ্নের সাথে আলিঙ্গন করবে।
যেদিন, তুমি নিজেই বলবে নিজেকে— "আমিই শ্রেষ্ঠতম।"
জীবনকে আর কখনোই ভারী মনে হবে না তোমার সেদিনের পরে।
হাসতে শেখো।
সবাই হাসতে পারেনি জীবনে।
ভালো থেকো কুড়ি, ভালো থেকো কুঁড়ি, প্রস্ফুটিত হও অপরূপতম।
দেরি হয়ে যায়
সঠিক মানুষটি সবসময় ফুল হাতে আসে না;
সে সবসময় প্রেমপত্র লিখবে, তাও নয়।
কবিতা আউড়ে সবসময় মুগ্ধ করে না সে।
নিয়মিত সিনেমায় নিয়ে গেলেই সে সঠিক মানুষ নয়।
নববর্ষে তোমাকে খোঁজে যে, সে-ই যে তোমার মানুষ, তা নয়।
সঠিক মানুষটিকে কলেজের মাঠে তোমার পাশে শুয়ে থাকতে হয় না।
সমুদ্রসৈকতে তোমার ছবি তুলে দিলেই সে তোমার নয়,
যার সাথে নাচার জন্য পুরো দুই দিন তুমি প্রতীক্ষা করো তুমি, সে-ই সে নয়।
সবসময় সুন্দরতম জোছনারাতে সঠিক মানুষটি আসে না,
শরতের হাওয়াই ছাদে তোমার পাশে সে থাকে না,
তলপেটে প্রজাপতির নৃত্য নিয়ে আসে না সে,
আসে না হৃৎস্পন্দনের দুন্দুভি নিয়ে।
সে আসে না তোমার গাল লজ্জায় লাল করে দিয়ে, সর্বদা।
মাঝেমাঝে—
সঠিক মানুষটি আসে তোমার ক্লান্ত দিনে,
সে আসে তোমার চুপচাপ যন্ত্রণা নিশ্চুপেই বুঝে নিতে,
সে তোমার অভিযোগ শুনতে আসে, অভিমান বুঝতে আসে।
সঠিক মানুষটি মুগ্ধ হয়ে তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে
যখন তুমি নিজেকে "বিচ্ছিরি" বলো।
তোমার মানুষ সে-ই, যার সামনে তুমি কাঁদতে পারো,
যার পাশে শুয়ে কাঁদার প্রতীক্ষা করো তুমি টানা তিনদিন।
প্রিয় মানুষটি আসে— ফুল হাতে নয়, হাসি মুখে নিয়ে;
সে আসে— তোমার প্রিয় রঙতুলি হাতে, হীরে পকেটে নিয়ে নয়।
সঠিক মানুষটি কবিতা শোনায় না সবসময়, প্রায়ই শোনায় ঘুমপাড়ানি মাসিপিসি।
তোমাকে বিরক্ত করে যে, প্রায়ই সে তোমার প্রিয় মানুষটি;
একই গল্প বারবার বলার পরেও যে বিরক্ত হয় না, সে-ই তোমার মানুষ।
প্রিয় মানুষটি সর্বদা তোমার প্রশংসা করে না, সে তোমার খুঁত নিয়েও ভাবে।
তোমার মানুষ সে—
যে পাশে এলে তোমার মনে হয়— 'আমি সম্পূর্ণ হলাম।'
সুন্দরতম স্থানেই সঠিক মানুষটির দেখা পেতে হয়, তা নয়;
নিখুঁত মানুষটিই সঠিক মানুষটি নয়।
মাঝেমাঝে তোমার জন্য সঠিক মানুষ সে-ই—
যার স্বপ্ন কখনোই দেখোনি তুমি;
কিন্তু, যাকে ছাড়া বেঁচে থাকা অকল্পনীয় লাগে তোমার।
সঠিক মানুষটি সবসময় সুন্দরতম মানুষটি নয়,
সঠিক মানুষটি সবসময় সুন্দরতম অনুভূতিটি।